ভূমিকা

ঈশ্বরকৃপায় আবির্ভাব-প্রয়োজনের সহিত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বাল্যজীবনের সবিস্তার বিবরণ প্রকাশিত হইল। নানা লোকের মুখ হইতে তাঁহার ঐ কালের ঘটনাসমূহ অসম্বদ্ধভাবে শ্রবণ করিয়া আমাদিগের চিত্তে যে চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে, পাঠককে তাহার সহিত পরিচিত করিতেই আমরা ইহাতে সচেষ্ট হইয়াছি। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভাগিনেয় শ্রীযুক্ত হৃদয়রাম মুখোপাধ্যায় ও ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীযুক্ত রামলাল চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি ব্যক্তিগণ আমাদিগকে ঘটনাবলীর সময়নিরূপণে যথাসাধ্য সাহায্য প্রদান করিলেও কোন কোন স্থলে উহার ব্যতিক্রম হইবার সম্ভাবনা থাকিয়া গিয়াছে। কারণ, তাঁহারা আমাদিগকে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পিতা ও অগ্রজ প্রভৃতির জন্মকোষ্ঠীসকল প্রদান করিতে পারেন নাই; কিন্তু 'শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মকালে তাঁহার পিতার বয়স ৬১।৬২ বৎসর ছিল' 'তাঁহার অগ্রজ রামকুমার তাঁহার অপেক্ষা ৩১।৩২ বৎসরের বড় ছিলেন', এইভাবে সময় নিরূপণ করিয়া বলিয়াছিলেন।

সে যাহা হউক, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্ম সম্বন্ধে যে সন ও তারিখ আমরা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করিলাম, তৎসম্বন্ধে যে কোন ব্যতিক্রমের সম্ভাবনা নাই, ইহা পাঠক 'মহাপুরুষের জন্মকথা' নামক এই গ্রন্থের পঞ্চমাধ্যায় পাঠ করিয়া নিঃসংশয়ে বুঝিতে পারিবেন। তাঁহার স্বীয় উক্তি হইতেই আমরা উহা নিরূপণে সক্ষম হইয়াছি, সুতরাং ঐ বিষয়ের জন্য তিনিই স্বরূপতঃ সর্বসাধারণের কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন। গ্রন্থস্থ ঘটনাবলীর অনেকগুলিই আমরা তাঁহার নিজমুখে শ্রবণ করিয়াছিলাম। শ্রীরামকৃষ্ণ-জীবনের লীলাবলী লিপিবদ্ধ করিবার প্রারম্ভে আমরা তাঁহার বাল্য ও যৌবনের ঘটনাসমূহকে যে এত বিশদ এবং সম্বদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ করিতে পারিব, এরূপ আশা করি নাই। সুতরাং, যিনি মূককে বাগ্মী করিতে এবং পঙ্গুকে বিশালগিরি-উল্লঙ্ঘন-সামর্থ্য-প্রদানে সক্ষম, একমাত্র তাঁহার কৃপাতেই উহা সম্ভবপর হইল ভাবিয়া আমরা তাঁহাকে বারংবার প্রণাম করিতেছি। উপসংহারে ইহাও বক্তব্য যে, পাঠক বর্তমান গ্রন্থ পাঠ করিবার পরে 'সাধকভাব' ও 'গুরুভাব' গ্রন্থ পাঠ করিলে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মকাল হইতে সন ১২৮৭ সাল বা ইংরাজী ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁহার জীবনেতিহাস ধারাবাহিকভাবে লিপিবদ্ধ দেখিতে পাইবেন। ইতি —

প্রণত
গ্রন্থকার