৩২ দক্ষিণেশ্বরে নবমীপূজা দিবসে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ২৯শে সেপ্টেম্বর
নরেন্দ্র, ভবনাথ প্রভৃতি মধ্যে সমাধিস্থ
হাজরা আসিয়া বসিলেন। এ-কথা ও-কথার পর ঠাকুর হাজরাকে বললেন, ‘দেখ, কাল রামের বাড়ি অতগুলি লোক বসেছিল, বিজয়, কেদার এরা, তবু নরেন্দ্রকে দেখে এত হল কেন? কেদার, আমি দেখেছি, কারণানন্দের ঘর।”
ঠাকুর পূর্বদিনে, মহাষ্টমীর দিনে কলিকাতায় প্রতিমাদর্শনে গিয়াছিলেন। অধরের বাড়ি প্রতিমাদর্শন করিতে যাওয়ার পূর্বে রামের বাড়ি হইয়া যান। সেখানে অনেকগুলি ভক্তের সমাবেশ হইয়াছিল। নরেন্দ্রকে দেখিয়া ঠাকুর সমাধিস্থ হইয়াছিলেন। নরেন্দ্রের হাঁটুর উপর পা বাড়িয়া দিয়াছিলেন, ও দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া সমাধি হইয়াছিল।
দেখিতে দেখিতে নরেন্দ্র আসিয়া উপস্থিত — ঠাকুরের আনন্দের আর সীমা রহিল না। নরেন্দ্র ঠাকুরকে প্রণামের পর ভবনাথাদির সঙ্গে ওই ঘরে একটু গল্প করিতেছেন। কাছে মাস্টার। ঘরের মধ্যে লম্বা মাদুর পাতা। নরেন্দ্র কথা কহিতে কহিতে উপুড় হইয়া মাদুরের উপর শুইয়া আছেন। হঠাৎ তাঁহাকে দেখিতে দেখিতে ঠাকুরের সমাধি হইল — তাঁহার পিঠের উপর গিয়া বসিলেন; সমাধিস্থ!
ভবনাথ গান গাহিতেছেন:
গো আনন্দময়ী
হয়ে মা আমায়
নিরানন্দ করো
না।
ও দুটি চরণ, বিনা
আমার মন, অন্য
কিছু আর জানে না ॥
ঠাকুরের সমাধি ভঙ্গ হইল। ঠাকুর গাইতেছেন:
কখন কি রঙ্গে থাক মা।
ঠাকুর আবার গাইতেছেন:
   
    বল রে
শ্রীদুর্গা নাম।
(ওরে
আমার আমার আমার রে)।
নমো নমো
গৌরী,
নমোনারায়ণী!
দুঃখী
দাসে
কর দয়া তবে গুণ
জানি ॥
তুমি
সন্ধ্যা, তুমি
দিবা তুমি গো
যামিনী।
কখন
পুরুষ
হও মা, কখন কামিনী ॥
রামরূপে
ধর
ধনু মা, কৃষ্ণরূপে
বাঁশী।
ভুলালি
শিবের মন মা হয়ে
এলোকেশী।
দশ
মহাবিদ্যা
তুমি মা, দশ অবতার।
কোনরূপে
এইবার আমারে কর মা
পার ॥
যশোদা
পূজিয়েছিল মা
জবা বিল্বদলে ।
মনোবাঞ্ছা
পূর্ণ কৈলি কৃষ্ণ
দিয়ে কোলে ॥
যেখানে
সেখানে থাকি মা,
থাকি গো কাননে।
নিশিদিন
মন থাকে যেন ও
রাঙ্গাচরণে ॥
যেখানে
সেখানে মরি মা,
মরি গো বিপাকে।
অন্তকালে
জিহ্বা যেন মা,
শ্রীদুর্গা বলে
ডাকে ॥
যদি বল
যাও
যাও মা, যাব কার
কাছে।
সুধামাখা
তারা নাম, মা আর
কার আছে ॥
যদি বল
ছাড় ছাড় মা, আমি
না ছাড়িব।
বাজন
নূপুর
হয়ে মা, তোর চরণে
বাজিব।
যখন
বসিবে
মাগো শিব
সন্নিধানে। —
জয় শিব
জয় শিব বলে
বাজিব চরণে ॥
চরণে
লিখিতে নাম
আঁচড় যদি যায়।
ভূমিতে
লিখিয়ে থুই নাম,
পদ দে গো তায় ॥
শঙ্করী
হইয়ে মাগো গগনে
উড়িবে ।
মীন হয়ে
রব
জলে মা, নখে
তুলে লবে ॥
নখাঘাতে
ব্রহ্মময়ি যখন
যাবে গো পরাণী।
কৃপা করে
দিও মা গো রাঙ্গা
চরণ দুখানি ॥
পার কর ও
মা কালী, কালের
কামিনী।
তরাবারে দুটু পদ করেছ
তরণী ॥
তুমি
স্বর্গ, তুমি
মর্ত্য, তুমি গো
পাতাল।
তোমা হতে
হরি ব্রহ্মা
দ্বাদশ গোপাল ॥
গোলকে
সর্বমঙ্গলা,
ব্রজে কাত্যায়নী।
কাশীতে
মা
অন্নপূর্ণা
অনন্তরূপিণী ॥
দুর্গা
দুর্গা দুর্গা
বলে যেবা পথে চলে
যায়।
শূলহস্তে
শূলপাণি রক্ষা
করেন তায় ॥