৩৭৬
স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত

মরী
১০ অক্টোবর, ১৮৯৭

অভিন্নহৃদয়েষু,

কাশ্মীর হইতে গত পরশু সন্ধ্যাকালে মরীতে পৌঁছিয়াছি। সকলেই বেশ আনন্দে ছিল। কেবল কেষ্টলাল ও গুপ্তের মধ্যে মধ্যে জ্বর হইয়াছিল — তাহাও সামান্য। এই Address (অভিনন্দনটি) খেতড়ির রাজার জন্য পাঠাতে হইবে — সোনালি রঙে ছাপাইয়া ইত্যাদি। রাজা ২১।২২ অক্টোবর নাগাদ বোম্বে পৌঁছিবেন। বোম্বেতে আমাদের কেহই এক্ষণে নাই। যদি কেহ থাকে, তাহাকে এক কপি পাঠাইয়া দিবে — যাহাতে সেই ব্যক্তি রাজাকে জাহাজেই ঐ Address প্রদান করে বা বোম্বে শহরেতে কোথাও। উত্তম কপিটি খেতড়িতে পাঠাইবে। একটি মিটিং-এ (সভাতে) ঐটি পাস করিয়া লইবে। যদি কিছু বদলাইতে ইচ্ছা হয়, হানি নাই। তাহার পর সকলেই সহি করিবে; কেবল আমার নামের জায়গাটা খালি রাখিবে — আমি খেতড়ি যাইয়া সহি করিব। এ বিষয়ে কোন ত্রুটি না হয়। যোগেন কেমন আছে পত্রপাঠ লিখিবে — লালা হংসরাজ সাহানি, উকিল, রাওলপিণ্ডির ঠিকানায়। রাজা বিনয়কৃষ্ণের তরফের Address (অভিনন্দন)-টা দুদিন নয় দেরী হবে — আমাদেরটা যেন পৌঁছায়।

এইমাত্র তোমার ৫ তারিখের পত্র পাইলাম। যোগেনের সংবাদে বিশেষ আনন্দিত হইলাম এবং আমার এই চিঠি পাইবার পূর্বেই হরিপ্রসন্ন বোধ হয় আম্বালায় পৌঁছিবে। আমি তাহাদিগকে ঠিক ঠিক advice (নির্দেশ) সেখানে পাঠাইব। মা-ঠাকুরাণীর জন্য ২০০ টাকা পাঠাইলাম — প্রাপ্তিস্বীকার করিবে। … ভবনাথের স্ত্রীর সম্বন্ধে কিছুই কেন লিখ নাই। তাহাকে দেখিতে গিয়াছিলে কি?

ক্যাপ্টেন সেভিয়ার বলিতেছেন যে, তিনি জায়গার জন্য অধীর হইয়া পড়িয়াছেন। মসূরীর নিকট বা অন্য কোন central (কেন্দ্রস্থানীয়) জায়গায় একটা স্থান যত শীঘ্র হয় — তাঁর ইচ্ছা। তাঁর ইচ্ছা যে, মঠ হতে দু-তিন জন এসে জায়গা select (পছন্দ) করে। তাদের মনোনীত হলেই তিনি মরী হতে গিয়ে খরিদ করে একদম বিল্ডিং শুরু করবেন। খরচ অবশ্য তিনিই পাঠাবেন। আমার selection (পছন্দ) তো এক আমাদের ইঞ্জিনিয়ার। বাকী আর যে যে এ বিষয়ে বোঝে — পাঠাবে। ভাব এই যে, খুব ঠাণ্ডাস্থানেও কাজ নাই, আবার গরমও হয় না। দেরাদুন গরমিকালে অসহ্য — শীতকালে বেশ। মসূরী itself (খাস মসূরী) শীতকালে বোধহয় সকলের পক্ষে ঠিক নয়। তার আগিয়ে বা পেছিয়ে — অর্থাৎ ব্রিটিশ বা গাড়োয়াল রাজ্যে জায়গা পাওয়া যাবেই। অথচ সেই জায়গার বারমাস জল চাই নাইবার-খাবার জন্য। এ বিষয়ে মিঃ সেভিয়ার তোমার খরচ চেয়ে পাঠিয়ে চিঠি লিখছেন। তাঁর সঙ্গে সমস্ত ঠিকানা করবে।

আমার plan (পরিকল্পনা) এক্ষণে এই — নিরঞ্জন, লাটু, দীনু এবং কৃষ্ণলালকে জয়পুর পাঠাই; আমার সঙ্গে কেবল অচু আর গুপ্ত। মরী থেকে রাওলপিণ্ডি, তথা হতে জম্মু, সেখান হতে লাহোর, তারপর একেবারে করাচি তথা হতে। আমি এখান হইতেই মঠের জন্য collection (অর্থসংগ্রহ) আরম্ভ করিলাম। যেখান হতে তোমার নামে টাকা আসুক না, তুমি মঠের ফণ্ডে জমা করিবে ও দুরস্ত হিসাব রাখিবে। দুটো ফণ্ড আলাদা — একটা কলিকাতার মঠের জন্য, আর একটা famine work etc. (দুর্ভিক্ষে সেবাকার্য ইত্যাদি)। আজ সারদা ও গঙ্গার দুইটি চিঠি পাইলাম। কাল তাদের চিঠি লিখব। আমার বোধহয় সারদাকে ওখানে না পাঠিয়ে Central Province (মধ্যপ্রদেশ)-এ পাঠান ভাল ছিল। সেখানে সাগরে ও নাগপুরে আমার অনেক লোক আছে — ধনী ও পয়সা-দেনেওয়ালা ইত্যাদি। যাহা হউক, আসছে নভেম্বরে সব হবে। আজ বড় তাড়া। এখানেই শেষ।

শশীবাবুকে আমার বিশেষ আশীর্বাদ ও প্রণয় দিও। মাষ্টার মহাশয় এতদিন বাদে কোমর বেঁধে নেমেছেন দেখছি। তাঁকে আমার বিশেষ প্রণয়ালিঙ্গন দিও। এইবার তিনি জেগেছেন দেখে আমার বুক দশহাত হয়ে উঠল। আমি কালই তাঁকে পত্র লিখছি। অলমিতি — ওয়া গুরুকী ফতে — To work! To work! (কাজে লেগে যাও, কাজে লেগে যাও)। তোমার সব চিঠিপত্র পেয়েছি। ইতি

বিবেকানন্দ